জ্বী, আপনি ঠিকই পড়েছেন। এতোদিন ধরে ধুমপায়ীরাই সবচেয়ে ঝুকির মধ্যে আছে বলা হলেও নতুন গবেষণায় উঠে এসেছে সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র। অধুমাপায়ীদের চেয়ে ধূমপায়ীদেরই করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আশংকা সবচেয়ে কম।
যুক্তরাজ্য থেকে প্রকাশিত ডেইলী মেইল এর রিপোর্টে এমনটাই উঠে এসেছে।
যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ফ্রাঙ্কোইস বেলউক্স বলেন, ধূমপায়ীদের করোনা আক্রান্তের হার যে অত্যন্ত কম তার পিছনে আমরা বেশ শক্তপোক্ত প্রমাণ পেয়েছি।
একাধিক চাইনিজ গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য থেকে দেখা যায় যে কোভিড -১৯ হাসপাতালের রোগীদের মধ্যে সাধারণ জনসংখ্যার তুলনায় ধূমপায়ীদের সংখ্যা খুব কম ছিল, তারা হাসপাতালে যাওয়ার সম্ভাবনা কম বলে মনে করেন।
চায়না এর জনসংখ্যার ২৬.৬ শতাংশ ধূমপায়ী হলেও, করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে ধুমপায়ী ছিলেন মাত্র ৬.৫ শতাংশ।
এমেরিকাতেও তার চিত্র ভিন্ন দেখা যায় নি। এমেরিকার জনসংখ্যার ১৪ শতাংশ ধূমপায়ী হলেও, করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে ধূমপায়ী ছিলেন মাত্র ১.৩ শতাংশ। এই গবেষনায় একই সাথে দেখা যায় যে, ধূমপায়ীদের মধ্যে করোনায় আক্রান্তদের খুব অল্প সংখ্যক রোগীকেই হাসপাতাল যেতে হয়েছিল।
কেন ধূমপায়ীদের মাঝে করোনা আক্রান্তের হার এতো কম, তার কারন বিজ্ঞানীদের কাছে এখনো অস্পষ্ট।
যুক্তরাজ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উভয় সরকারই ভাইরাস থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য লোকদের ধূমপান বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে, তবে বিজ্ঞানীরা স্বীকার করেছেন যে সিগারেটের ফলে রোগটি আরও খারাপ হতে পারে এমন কোনও সুস্পষ্ট প্রমাণ নেই।
অনান্য গবেষকরা এখনো প্রফেসর ফ্রাঙ্কোইস বেলউক্স এর গবেষণা পত্রটি পর্যালোচনা করেন নি। অনেকের মতে এখানে তথ্যের ঘাটতি রয়েছে।
গবেষকরা বলেন, নিকোটিন এবং করোনাভাইরাস উভয়ই ফুসফুসের অভ্যন্তরের কোষগুলিতে একই রিসেপ্টরগুলির সাথে যোগাযোগ করে।
অ্যাথেন্সের ওয়েস্ট অ্যাটিকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ড. কনস্টান্টিনোস ফার্সালিনোস ও ডা. আনাস্তাসিয়া বারবৌনি এবং নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. রেমন্ড নিওউরা এর যৌথ গবেষনায় উঠে আসে এক তথ্য, তারা বলেন, করোনা ভাইরাস ফুসফুসের ACE-2 রিসেপ্টরের সাথে যুক্ত হয়ে ফুস্ফুস কে আক্রান্ত করে। যারা ধুমপায়ী তা
দের ফুস্ফুসের এই ACE-2 এমনিতেই কম কার্যকর থাকে, যার কারনে করোনাভাইরাস এই রেসেপ্টরের সাথে যুক্ত হতে পারে না। আর তার কারনেই ধূমপায়ীদের ঝুঁকি কমে যায়।
গবেষকরা একই সাথে এটাও বলেন , এই ACE-2 রিসেপ্টর ফুস্ফুসের নিচু জাতের ভাইরাস এর সংক্রমন থেকে রক্ষা করে।
ফরাসী বিজ্ঞানী অধ্যাপক জাঁ-ফ্রানসোয়া ডেলফ্রেসি, যিনি কোভিড -১৯ সম্পর্কে দেশটির সরকারকে পরামর্শ দেওয়ার জন্য একটি বৈজ্ঞানিক কাউন্সিলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তিনি বলেছিলেন, “তামাকের ভেতর বিশেষ কিছু ব্যাপার আছে।”
ফরাসী নিউজ সাইট সুড ওয়েস্ট জানিয়েছে, ” আমরা দেখতে পেয়েছি যে, করোনায় গুরুতর আক্রান্ত রোগীদের বেলায় দেখা গেছে, বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই তারা ধূমপায়ী নন, বরং তামাক নিকোটিনের মাধ্যমে এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয়, ।
আমেরিকার সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রেভেনশন (সিডিসি) এর প্রাথমিক তথ্য থেকে দেখা গেছে যে কভিড-১৯ সনাক্ত হওয়া মাত্র ১.৩ শতাংশ মানুষ ধূমপায়ী।
এমেরিকার ৭১৬২ জন করোনা রোগীর উপর এক জরিপ চালানো হয়। রোগীদের মধ্যে মাত্র ৯৬ জন ধূমপায়ী ছিলেন। হাসপাতালের আইসিইউ তে থাকা ৪৫৭ জন রোগীর মধ্যে মাত্র পাঁচজন ধূমপায়ী।
যদিও আমেরিকানদের মধ্যে ১৪ শতাংশ নিয়মিত ধুমপান করে।
ধূমপান এবং করোনাভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার বা অসুস্থ হওয়ার কম ঝুঁকির মধ্যে কোনও যোগসূত্র রয়েছে কিনা, বা কে ধূমপান করছে এবং কে স্ক্র্যাচ করে না তার রেকর্ডিং কিনা তা পরিষ্কার নয়।
ডেইলী মেইল অবলম্বনে।