‘আমলযোগ্য অপরাধ সংঘটিত করার কারণে তাদের বিরুদ্ধে মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। তাদের গ্রেফতারে সরকার কিংবা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের নিকট পূর্বানুমতি গ্রহণ করার প্রয়োজন নেই’
ঢাকা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি আরিফুল ইসলামকে হত্যার উদ্দেশে গত ১৩ মার্চ মধ্যরাতে অপহরণ ও বর্বর নির্যাতনের ঘটনায় সাবেক ডিসি সুলতানা পারভীনসহ অপরাপর আসামিদের বিরুদ্ধে আরিফুল ইসলামের দাখিল করা এজাহারটি হাইকোর্টের নির্দেশে রেকর্ড করেছে কুড়িগ্রাম সদর থানা পুলিশ।
আসামিরা হলেন- কুড়িগ্রাম থেকে প্রত্যাহার হওয়া সাবেক জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন, রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর (আরডিসি) নাজিম উদ্দীন, মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহাকারী কমিশনার রিন্টু বিকাশ চাকমা, সহকারী কমিশনার (নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট) এসএম রাহাতুল ইসলাম ও অজ্ঞাতনামা ৩৫-৪০ জন সরকারি কর্মচারি।
গত ১৯ মার্চ সাংবাদিক আরিফুল ইসলামের দাখিল করা এজাহারটি মঙ্গলবার (৩১ মার্চ) রাতে মামলা হিসেবে রেকর্ড করেন কুড়িগ্রাম সদর থানার ওসি মাহফুজার রহমান।
এর আগে হাইকোর্ট বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি সরদার মো. রাশেদ জাহাঙ্গীর এর অবকাশকালীন দ্বৈত বেঞ্চে রীট আবেদনের পরিপেক্ষিতে হাইকোর্টের এই নির্দেশ দেন।
এ বিষয়ে ওসি মাহফুজার রহমান বলেন, “মহামান্য হাইকোর্টের আদেশের কপি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এজাহারটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে। যেহেতু সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগানের মামলাটি একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা ছিল এবং আসামিরা অপরাপর সরকারি উচ্চ পদস্থ চাকরিজীবী সেহেতু অধিকতর গুরুত্বে সাথে দেখা হচ্ছে।”
সাবেক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও ক্রিমিনাল আইন বিশেষজ্ঞ আজিজুর রহমান দুলুর নিকট আসামীদের গ্রেফতার সম্পর্কে আইনগত ব্যাখ্যা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমলযোগ্য অপরাধের সূত্রে পুলিশ মামলা রেকর্ড করার পরে আসামিদের গ্রেফতার করতে পারেন। যেহেতু এই মামলাটি আমলযোগ্য ক্রিমিনাল মামলা সেহেতু পুলিশ তদন্তকালীন সময়ে অন্যান্য আমল যোগ্য মামলার মতোই আসামিদের গ্রেফতার করতে পারেন। এই জন্য যে, আসামিগণ সরকারি কর্মচারি হলেও তাদের দায়িত্ব পালনের সাথে সম্পর্কিত অভিযোগের বাইরে আমলযোগ্য অপরাধ সংঘটিত করার কারণে তাদের বিরুদ্ধে মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। সেহেতু তাদের গ্রেফতারে সরকার কিংবা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের নিকট পূর্বানুমতি গ্রহণ করার প্রয়োজন নেই।যেহেতু মামলার অভিযোগ গুরুতর সেহেতু পুলিশ অভিযোগের গুরুত্ব বিবেচনা করে ন্যায় বিচারের জন্য আসামিদের গ্রেফতার করতে পারেন”
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইশরাত হাসান বলেন, “দেরিতে হলেও হাইকোর্টের নির্দেশে সাবেক ডিসি সুলতানা পারভীন, আরডিসি নাজিম উদ্দীন, নির্বাহী ম্যজিস্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমা, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এসএম রাহাতুল ইসলামসহ অজ্ঞাতনামা অন্যান্যদের সরকারি কর্মচারিদের বিরুদ্ধে পুলিশ এফআইআর লজ করেছেন। আশা করি এই মামলার মাধ্যমে সমাজে সবার কাছে এই উদাহরণ সৃষ্টি হবে যে, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। অপরাধী যত বড় পদেই চাকুরি করুক না কেন বা যত ক্ষমতাবানই হোক না কেন? তিনি কারও উপর অন্যায়ভাবে অত্যাচার ও ক্ষমতার অপব্যবহার করতে পারেন না।ক্ষমতার দাম্ভিকতায় যেন কেউ মনে না করেন, যে তিনি যাই করেন না কেন? তার কিছুই হবে না। এমনটা ভাবা ঠিক না।”
সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম বলেন, “আদালতের প্রতি আমার আস্থা ও বিশ্বাস আছে। আমি আদালতে ন্যায় বিচার প্রার্থনা করেছিলাম। সরকার ও আদালত আমার ন্যায় বিচার প্রাপ্তিতে যথেষ্ট সচেষ্ট। তারই অংশ হিসেবে এই মামলা রেকর্ড করা হলো। এখন অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করে দৃষ্টান্তমূলক শান্তি নিশ্চিত করা প্রয়োজন এই জন্য যে, যেন সমাজে এটি একটি নজির হয়ে থাকে।”