এ ব্যাপারে আজকের আলোচনা করবেন, ঢাকার মাসজিদুল জুমা কমপ্লেক্স এর সম্মানীত খতীব আব্দুল হাই মুহম্মদ সাইফুল্লাহ।
আমাদের কাছে অনেকেই একটি প্রশ্ন করে যে, আজকের এই পরিস্থিতি তে প্রবাসে এবং দেশে তিনটি জুম্মার অধিক মিস হয়ে গেলো। আমরা তো শুনেছি তিনটি জুম্মার অধিক কেউ জুম্মার সালাত ত্যাগ করে তার ঈমান থাকে না, তাহলে আমাদের ঈমান আছে কী না, আর এই যে ঈমান থাকে না এই কথাটি আমরা শুনেছি এটা কী সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমানিত কীনা, বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা জুম্মা পড়তে পারছি না, এক্ষেত্রে কী আমরা ঈমান টিকিয়ে রাখার স্বার্থে ব্যক্তিগত উদ্যোগ আমরা জুম্মা আদায় করে নিতে পারবো কী না। এ ধরণের নানবিধ প্রশ্ন আমাদের কাছে এসেছে, বিশেষ করে প্রবাসী ভাইয়েরা মধ্যপ্রাচ্যে যারা আছেন তারাও এই প্রশ্নটি করছেন আমাদের কাছে। আমরা জুম্মা ছেড়ে দিচ্ছি। পর পর আমাদের চারটা জুম্মা চলে গেল। তাহলে আমাদের ঈমানের কী হবে?
আমরা সংক্ষিপ্ত সময়ে এই বিষয়ে কিছু কথা জানার চেষ্টা করবো।
প্রিয় ভাইয়েরা জুম্মার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় নির্দেশনা হচ্ছে, সুরা জুম্মার আয়াত ৯ঃ
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نُودِيَ لِلصَّلَاةِ مِنْ يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَى ذِكْرِ اللَّهِ وَذَرُوا الْبَيْعَ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَكُمْ إِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُونَ ﴿٩
(৯) হে বিশ্বাসীগণ! জুমুআর দিনে যখন নামাযের জন্য আহবান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের জন্য ধাবিত হও এবং ক্রয়-বিক্রয় ত্যাগ কর। এটাই তোমাদের জন্য শ্রেয়, যদি তোমরা উপলব্ধি কর।
এটাই জুম্মার দিনের অন্যতম ফরয, ইসলামের অন্যতম বিধান এটি। এবং যোহরের পরিবর্তে এই জুম্মা কে আল্লাহ ফরয করেছেন।
আল্লাহর রাসূল(স.) বলেন, তোমাদের এই অভ্যাস পরিত্যাগ করা উচিত, যে তোমরা জুম্মা কে ছেড়ে দিচ্ছ। যদি তোমরা এরকম করতেই থাকো, আল্লাহ তোমাদের কাফের (আরেক জায়গায় এসেছে মুনাফেক) বানাই দিবে তোমাদের।
সুতরাং জুমার গুরুত্ব অপরিসীম। জুমা ছেড়ে দেয়ার ক্ষেত্রে অনেক বড় নিষেধাজ্ঞা আমাদের কাছে এসেছে।
এখন আমরা বলছি জুমা যদি আমরা ছেড়ে দেই ঈমান চলে যায় কী না। এ বিষয়ে কিছু হাদীস এসেছে এগুলো পর্যালোচনা করি। এর পর আমরা জানার চেষ্টা করবো বর্তমান পরিস্থিতে( করোনা মহামারী) জুমা ত্যাগ করলে আমাদের অপরাধ হচ্ছে না কী করবো আমরা।
আবু দাউদ এর ১০৫২ নং হাদীস- আবুল জা’দ আদ-দামরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، حَدَّثَنَا يَحْيَى، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ عَمْرٍو، قَالَ حَدَّثَنِي عُبَيْدَةُ بْنُ سُفْيَانَ الْحَضْرَمِيُّ، عَنْ أَبِي الْجَعْدِ الضَّمْرِيِّ، – وَكَانَتْ لَهُ صُحْبَةٌ – أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ “ مَنْ تَرَكَ ثَلاَثَ جُمَعٍ تَهَاوُنًا بِهَا طَبَعَ اللَّهُ عَلَى قَلْبِهِ ” .
যিনি, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সহাবী ছিলেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি (বিনা কারনে) অলসতা করে পরপর তিনটি জুমু’আহ ত্যাগ করে মহান আল্লাহ তার অন্তরে সীলমহর মেরে দেন।
এই হাদীসগুল থেকে তিনটি শব্দ পাই,
- তাহাউন (মানে ইচ্ছাকৃত ভাবে)
- দরুরাতীন (প্রয়োজনে)
- উযর (যদি কোন কারনে)
যারা ইচ্ছাকৃতভাবে জুমা ছেড়ে দেয় আল্লাহ তার হৃদয়ে অন্ধকারে পরিপূর্ণ করে দেয়।
এসব থেকে যা পাই, কোন ব্যক্তি যদি অপারঙ্গম হয়, সে কোন পরিস্থিতিতে পড়ে যে পরিস্থিতিতে সে জুমায় অংশগ্রহন করতে পারবে না। কোন ওযর থাকে, যে ওযরের কারনে সে জুম্মা পড়তে পারবে না , এমনকি পর পর তিন জুম্মাও যদি তার মিস হয়, এটা যদি কোন বৈধ ওযর হয় , তবে সেক্ষেত্রে সে যেনো যোহর পড়ে নেয় ।
সুতরাং যে ভাইয়েরা দুশ্চিন্তার মধ্যে আছেন আমাদের তিন জুমা চলে গেলো, চার জুমা চলে গেলো, আমরা এখন কী করবো? আমার পরামর্শ আপনি যোহরের সালাত আদায় করে নিবেন। এক্ষেত্রে ঈমান যাওয়ার ইনশাল্লাহ কোন সম্ভাবনা নাই , কারন এখন যে জুমায় আমরা যাচ্ছি না, এটা না আমাদের বিনা ওযর, না আমাদের ইচ্ছাকৃত, না আমাদের গাফলতির কারনে।
এটা আমাদের ওলামায়ে কেরাম তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী, আমাদের সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। আমাদের জুমার জামাত কে যেভাবে সংক্ষিপ্ত আকারে স্বল্প উপস্থিতিতে করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, এটা আমাদের দেশের সুনামধন্য আলেমগনের সিদ্ধান্ত। যারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তারা ফতোয়ার দিক দিয়ে, জ্ঞানের দিক দিয়ে অনেক বিজ্ঞ। এটা তাদের ঐক্যমতের সিদ্ধান্তে গৃহীত।